গোপী-চন্দন (गोपी-चन्दन) বৈদিক শাস্ত্রসম্মত একটি পবিত্র মাটি, যা বিশেষত গৌড়ীয় বৈষ্ণব এবং সংপ্রদায়িক ভক্তবৃন্দ দ্বারা ব্যবহৃত হয় তিলক ধারণের জন্য। এই পবিত্র চন্দন ধার্মিক শুচিতা, আত্মিক শুদ্ধতা এবং ভগবৎস্মরণের এক অনুপম বাহ্যিক চিহ্ন। বৈদিক সাহিত্যে গোপী-চন্দনের ব্যবহার এক গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে।
? স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ এবং অন্যান্য বহু গ্রন্থে গোপী-চন্দনের গৌরব বর্ণনা করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে:
“गोपिचन्दनमासाद्य यो लले च तिलकं धरेत्।
स याति विष्णुलोकं च न संशयः पुनर्भवः॥”
অর্থ:
যে ব্যক্তি গোপীচন্দন দ্বারা তিলক অঙ্কন করে, সে নিশ্চিতভাবে বৈকুণ্ঠধামে গমন করে এবং আর পুনর্জন্মগ্রহণ করে না।
? বলা হয়, এই চন্দনের উৎস সেই দ্বারকা অঞ্চলের পবিত্র হ্রদ, যেখানে শ্রীকৃষ্ণলীলার অন্তে গোপীগণ তাঁদের পার্থিব দেহ ত্যাগ করেন এবং তাঁদের শুদ্ধ ভক্তির কারণে ঐ ভূমিই পবিত্র চন্দনরূপে রূপান্তরিত হয়।
তিলক হচ্ছে ভক্তের শরীরে "ভগবতের মন্দির" বলে চিহ্নিত করার প্রতীক।
গোপীচন্দন দ্বারা তিলক ধারণ মানে হচ্ছে:
"এই দেহটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবাার্থে নিবেদিত।"
দুটি খাড়া রেখা (উর্ধ্বমুখী “U” আকার) – যা ভগবান বিষ্ণুর চরণ পদ্মকে নির্দেশ করে
মধ্যবর্তী শ্রীখণ্ড – যা তুলসী দেবী বা ভক্তির প্রতীক
বৈদিক আচারে বলা হয়েছে:
প্রত্যহ গোপীচন্দন তিলক না থাকলে, কোন বৈদিক কাজ বা পূজা সম্পূর্ণ হয় না
এটি দেহে ধারনের মাধ্যমে পাপ দূরীভূত হয়
তিলক দ্বারা মন একাগ্র হয়, ধ্যানে সহায়তা করে
স্নানের পর বিশুদ্ধ অবস্থায়, গোপীচন্দন জল দিয়ে ঘষে পেস্ট তৈরি করতে হয়
উদ্ধরণী কাঠি ব্যবহার করে কপালে তিলক অঙ্কন
শরীরের ১২টি স্থানে তিলক দেওয়া হয় (উদাহরণ: কপাল, বুকে, বাহু, পেটে ইত্যাদি), সাথে সাথে নাম-মন্ত্র জপ করা হয়
প্রতিটি স্থানে নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করে তিলক অঙ্কন বৈদিকভাবে সম্পন্ন হয়
উদাহরণস্বরূপ (কপালে):
“ॐ केशवाय नमः”
আধ্যাত্মিক দিক | বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা |
---|---|
বিষ্ণুর আশ্রয় লাভ | কপাল ঠান্ডা রাখে, স্নায়ু শান্ত রাখে |
পাপ বিনাশ ও পুনর্জন্ম মুক্তি | মনঃসংযোগ বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমায় |
দেহকে ভগবানের আবাস রূপে গ্রহণ | প্রাকৃতিক ও টক্সিনমুক্ত |
গোপী-চন্দন শুধুমাত্র এক প্রকার মাটি নয়, বরং এটি এক আত্মিক সংস্কার। প্রতিদিন এটি ধারন করা মানে নিজেকে বারংবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, “আমি ভগবানের সেবক, এই দেহ তাঁর মন্দির, এবং আমার জীবন তাঁর সেবার জন্যই।”